ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

ধর্ষক ধর্মগুরুদের প্রতি মানুষ কেন আস্থা রাখে?

guruনিউজ ডেস্ক :::

ভারতের স্বঘোষিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে দুটি ধর্ষণ মামলায় ২০ বছরের কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছেন বিশেষ সিবিআই আদালত। শুক্রবার রাম রহিমকে ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত করার সহিংসতায় ৩৮ জন নিহত হয়েছে।

রাম রহিমের বিরুদ্ধে রায়ের পর ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত ধর্মগুরুদের প্রতি মানুষ কেন আস্থা রাখে তা নিয়ে ভারতের দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয় ও সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কে শুরু হয়েছে। ভারতে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত কয়েকজন ধর্মগুরু হলেন-

আসারাম বাপু
বয়স ৭৬ বছর, সাদা হয়ে যাওয়া দাড়ি যেন পবিত্রতা ছড়ায়। এই গুরু একবার ভ্যালেন্টাইন’স ডে-কে ভারতে পশ্চিমা সংস্কৃতির আগ্রাসন হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। ২০১৩ সালে এক কিশোরী ভক্তকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে আরেক নারী ভক্তও তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন।

২০১৩ সাল থেকে ধর্ষণ ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে কারাগারে রয়েছেন তিনি। তার ছেলে নারায়ন সাই ধর্ষণের অভিযোগে কারাগারে রয়েছেন। ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে তিনি তার বাবার এক ভক্তকে ধর্ষণ করেন। ওই নারী আশ্রমে বাস করতেন। ৪০ বছরের সাইয়ের বিরুদ্ধে আরও ৮ নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় পত্রিকার খবর অনুসারে, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তিনজন সাক্ষীর রহস্যজনক মৃত্যুর পর আরও কঠিন পরিস্থিতিতে পরতে পারেন এই ধর্মগুরু।

এরপরও আসারাম বাপু যখন আদালতে শুনানিতে উপস্থিত হন তখন তার কয়েক হাজার ভক্ত তাকে অনুপ্রেরণা ও ভক্তি জানাতে হাজির হন।

গঙ্গানন্দ তীর্থপথ
কল্লাম এলাকার স্বঘোষিত ধর্মগুরু তীর্থপথ। পাঁচ বছর ধরে আইনের এক শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রতিশোধ হিসেবে ওই শিক্ষার্থী তীর্থপথের পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলেন বলে চলতি বছরের মে মাসে খবর প্রকাশিত হয়েছে। অবশ্য তীর্থপথ দাবি করেছেন, অনুশোচনা করতে তিনি নিজেই পুরুষাঙ্গ কেটেছেন।

মেহদি কাসিম
২০১৬ সালের এপ্রিলে মুম্বাইয়ের একটি আদালত ৪৩ বছরের স্বঘোষিত ধর্মগুরু মেহদি কাসিমকে সাত মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। চার বোনের সঙ্গে কাসিমের পরিচয় ছিল। যাদের মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ছেলে ও স্বাস্থ্যবান মেয়ে রয়েছে। কাসিম ওই চার বোনকে প্রতিশ্রুতি দেন ছেলেদের সারিয়ে তোলার।  তিনি ‘চিকিৎসা’র জন্য সুস্থ মেয়েদের তার কাছে পাঠানোর জন্য বলেন।

সান্তোষ মাধবন ওরফে অমৃতা চৈতন্য
২০০৯ সালে কেরালার একটি আদালত মাধবনকে তিন নাবালিকাকে ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত করে। মাধবন দরিদ্র পরিবারের এই তিন মেয়েকে আটক রেখে নির্যাতন করেন। ২০০৯ সালে তাকে ১৬ বছরের কারাদণ্ড ও ২ লাখ ১০ হাজার রুপি জরিমান করে আদালত। দুবাইভিত্তিক এক নারীর কাছ থেকে প্রতারণা করে ৪০ লাখ রুপি নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

স্বামী প্রেমানন্দ
১৯৮৪ সালে গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত শ্রীলঙ্কা থেকে ভারতে আসেন প্রেমানন্দ। এরপর তিরুচিরাপল্লিতে তিনি নিজের আশ্রম গড়ে তোলেন। ১৯৯৪ সালে তার বিরুদ্ধে আশ্রমের এক তরুনী ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। ১৯৯৭ সালে প্রেমানন্দ ও তার ছয় সহযোগীকে ১৩ বছরের নাবালিকাকে ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেয় আদালত।

জ্ঞানচৈতন্য
তিন খুনের অপরাধে ১৪ বছর কারাভোগ করেন এই স্বঘোষিত ধর্মগুরু। কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি এক ব্রিটিশ পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি ওই পরিবারের কাছে দাবি করেন তাদের মেয়ে পূর্ব জন্মে তার স্ত্রী ছিলেন। পরে ওই নারীকে কয়েক বছর ধরে যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতন করেন। পালিয়ে ওই নারী বাবা-মা ও পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। পরে তাকে আবারও গ্রেফতার করা হয়। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস।

পাঠকের মতামত: